হীরা – জান্নাতুল রিকসনা
আজ সুপ্তির জন্মদিন! আশিকের গার্ল ফ্রেন্ড সুপ্তি। আশিক তার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে গাজীপুর গার্ডেন সিটিতে আয়োজন করেছে সারপ্রাইজ পার্টি! বেশিদিনের প্রেম হয়নি তাদের! পাঁচ কি ছয়মাসের হবে।
প্রশস্ত পুকুর পাড়টির পশ্চিমের কোণায় সাজানো হয়েছে কাচা ফুল আর বেলুন দিয়ে। কেয়ার টেকারের সহযোগিতায় নেয়া হয়েছে ছোট্ট একটা টেবিল। রঙিন কাপড় আর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে টেবিলটা। পুকুর পাড়ের দু’পাশে নারিকেল গাছের সারি। প্রতি গাছে বেলুন আর স্টিকার দিয়ে সাজানো হয়েছে। সুপ্তি যখন প্রধান ফটক দিয়ে রিসোর্টে ঢুকলো তখন অকস্মাৎ চোখ বেঁধে দিল আশিক। তারপর সুপ্তির বান্ধবী রূপাকে ইশারায় বলা হলো সামনের দিকে এগুতে।
আশিক লাল গোলাপ আর মল্লিকা ফুলের তোড়া নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। সুপ্তি কাছে আসতেই তার চোখের বাঁধন খুলে দেয়া হলো, আশিক ফুলের তোড়া এগিয়ে দিতে দিতে বলল, হ্যাপী বার্থ ডে টু ইউ এন্ড আই লাভ ইউ টু মাচ! সুপ্তী খুশিতে লাফিয়ে উঠলো! সুন্দর মুখটা আরও ঝলমলে হয়ে গেলো। তারপর ফুলের পাপড়ি ছড়ানো পথে হাঁটতে হাঁটতে এগুতে লাগলো আর একেকটা নারিকেল গাছের আড়াল থেকে একেকজন বন্ধু বের হয়ে উপহারসহ উইশ করলো সুপ্তীকে।

সুপ্তী অবাক না হয়ে পারলো না! কপালগুণে এমন রোমান্টিক আর কেয়ারিং প্রেমিক জুটে। তারপর কেক কাটা টেবিলের পাশে দাঁড়ালো। বক্সসেট থেকে হাই ভলিউমে বেজে উঠলো আজ জন্মদিন তোমার গানটি।
সবাই মিলে সুপ্তীর গায়ে ফুল ছিটাতে লাগলো। এমন সময় কোত্থেকে দুইটা বোরকা পরা মেয়ে তাদের হ্যাপী বার্থ ডে লেখা ককশীটের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। সুপ্তী ডাক দিলো, এইযে আপুরা, শুনুন! আজ আমার জন্মদিন, কেক খান প্লীজ।
আগন্তুক মেয়ে দুটি কেক হাতে নিলো। সেখান থেকে একজন মেয়ে তার পাশের মেয়েটির ব্যাগ থেকে একটা টিফিন বক্স বের করে টেবিলের উপরে রাখতে রাখতে বলল, এখানে তুলশীমালা চাল আর খেজুরের গুড়ের পায়েস আছে। আজ আমার বান্ধবীরও বিশেষ দিন ছিল। আপনারা সবাই মিলে পায়েস খেয়ে নিবেন। একথা বলেই তারা চলে গেলো।
আশিক, সুপ্তি আর তাদের বন্ধুরা যখন আনন্দ উল্লাসে পায়েস খাচ্ছে আর হাসাহাসি করছে তখন আবার এলো বোরকা পরা মেয়েটি, তারপর বলল, আশিকের দিকে তাকিয়ে বলল দুঃখিত ভাইয়া, আপনাকে অভিনন্দন জানাতে ভুলে গেছিলাম, এ কথা বলে একটা কাগজের টুকরো হাতে গুজে দিয়ে চলে গেলো। আশিক পকেটে রেখে পায়েস শেষ করে, সবাই ফটোশুট করে গানের আসর করলো। তারপর আনন্দের রেশ নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো। রাতে আনন্দে ভাসা শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিয়ে সেই চিরকুটটার কথা মনে পড়লো, ভাজ খুলে পড়তে শুরু করলো,
আশিক,
আজকের পায়েসটা তোমার জন্যই রান্না করা। আমাদের প্রপোজ ডে তে এই গার্ডেনেই দেখা করতাম যে কয়বার সময় পেয়েছো তুমি। আমাদের এত বছরের রিলেশনে কখনও সারপ্রাইজ দাওনি তুমি! কখনও সখনও উইশ করতেও ভুলে যেতে! ঘনঘন দেখা করতে সময় পেতে না। সারাদিন খুব কমই যোগাযোগ করতে! বিজি থাকতে! সম্পর্কে তিক্ততা বেড়ে গেলো! প্রায়ই ঝগড়া হতে লাগলো। আট নয় মাস থেকে আমাদের কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। এ ক’টা মাস খুব চেষ্টা করেছিলাম তোমায় ভুলে যেতে! কিন্তু পারিনি গো! খুব যে ভালোবাসতাম তোমায়! তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছওলাম তোমার হাতেই হাত রেখে বাকি পথটা চলতে। তাই আমাদের নবম প্রপোজ ডে টে এখানে তোমায় কল দিয়ে এনে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। তুমি যদিও বদলালে কিন্তু অন্যের প্রেমিক হয়ে!
আজকাল অনেক রোমান্টিক হয়েছো দেখে ভালো লাগলো! আমি পারিনি তোমার ভালোবাসা আদায় করতে! সব দায় মেনে নিয়ে চলে গেলাম তোমার জীবন থেকে চিরতরে! ভালো থেকো!
ইতি
তোমার হতভাগিনী প্রাক্তন
হীরা

জান্নাতুল রিকসনার অন্যান্য লেখাগুলো:
- আমিই সেই তুলশীমালা : জান্নাতুল রিকসনা
- তুলশীমালার ঘ্রাণেজান্না : তুল রিকসনা