শেরপুরের তুলশীমালা চালে পাওয়া যায় সুগন্ধ, স্বাদ ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধন। ফলে শেরপুরের মানুষের কাছে এই চালের বিশেষ কদর রয়েছে। কারণ জন্মের পর থেকেই তারা তুলশীমালা চালের পোলাও, পায়েস, খিচুড়ি, পিঠা ইত্যাদি খেয়ে বড় হয়েছে। তাই একটা আবেগ কাজ করে সবসময়। ফলে বাসায় মেহমান আসলেও সকল প্রকার রান্নাবান্নায় স্থান পায় নিজ এলাকা তুলশীমালা।
১। জমিদারদের প্রিয় চাল ইতিহাসের পাতায়
দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বেও শেরপুরে ছিল জমিদারি শাসন। আড়াই আনী, পৌনে তিন আনী ও নয়আনী জমিদাররা পরিচালনা করতও এই তল্লাট। তাদের শাসনেই জীবনযাপন করে শেরপুর অঞ্চলের মানুষ। আর তাদের পাতে জুটত এই অঞ্চলের কৃষকের উৎপাদিত শেরপুরের তুলশীমালা চালের ভাত। এখনো ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে পাওয়া যায় এই তথ্য।
২। কেন এই চালের নাম ‘জামাই আদর’ হলো?
জমিদারি প্রথা শেষ হলে স্থানীয় লোকজনের কাছেই কদর বাড়ে তুলশীমালার। খাবার সুস্বাদু এবং নিজেদের জমিতে উৎপাদন হওয়ার কারণে সব কৃষকের ঘরে ঘরেই ছিল এই চাল। তাই মেয়ের জামাই আপ্যায়নে ব্যবহার বাড়তে থাকে দিনে দিনে। নতুন জামাইর জন্য খাদ্য উৎপাদের গুরুত্ব বাড়তে থাকায় মুখে মুখে রটে যায় জামাই আদুরে চাল হিসেবে। আর নতুন ধান উঠলেই মেয়ের বাড়িতে তুলশীমালা চাল না পাঠিয়ে নিজেরা খেতে পারেন না শেরপুরের কৃষকগণ। এটাও আরেকটা রেওয়াজ হিসেবে প্রচলিত হয়ে যায়।

৩। তুলশীমালার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য
তুলশীমালা আকারে ছোট ও চিকন দানার সাদা চাল। এই চালের হালকা মিষ্টি ঘ্রাণ খাওয়ার সময় মুগ্ধতা ছড়ায়। এই চাল সবসময় আতপচাল হিসেবেই প্রস্তুত করা হয়। রান্নার পর হয় খাবার হয় ঝরঝরে। হালকা স্মেল আর ঝরঝরে খাবার মুগ্ধ করে যে কাউকে। আর শেরপুরের তুলশীমালা চালের খাবারে কোন প্রকার অস্বস্তি বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা না হওয়ার কারণে পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রেখেছেন ভোজন প্রিয়রা।

৪। শেরপুরের মাটি ও আবহাওয়ায় তুলশীমালার জন্ম
শেরপুরের মাটি ও আবহাওয়ায় তুলশীমালা চালের জন্ম হওয়ার কারণে অর্জন করেছে ভৌগোলিক নির্দেশক (GI) পণ্যের স্বীকৃতি। যা সারাদেশে শেরপুরের তুলশীমালা চালের পরিচিতি বাড়াতে দারুণভাবে অবদান রাখছে। জিআই স্বীকৃতি এই চালের গুরুত্বের একটি স্বীকৃতি দিয়েছে। যা প্রমাণ করে এই চাল আর কোথাও সমান গুণাগুণ নিয়ে উৎপাদন হয় না। এছাড়াও এটি শেরপুরের জেলা ব্র্যান্ডিং চাল।
৫। তুলশীমালা উৎপাদনের প্রক্রিয়া
আমন মৌসুমে উৎপাদন হয় এই ধান। সাধারণত ডিসেম্বর মাসেই জমি থেকে ধান কেটে কৃষক ঘরে নিয়ে আসেন কালো রঙের এই ধান। যা উৎপাদনের সময় ৫ বার রঙ বদলায়। কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রম ও যত্নে ঘরে উঠে তুলশীমালা আর ঘরে উঠলেই খুশীতে মন ভরে উঠে তাদের।

৬। শুধু পোলাও বা বিরিয়ানি নয় তুলশীমালা দিয়ে হয় শত পদ
পোলাও বা বিরিয়ানির জন্য শেরপুরের তুলশীমালা চাল বিখ্যাত হলেও পায়েস, খিচুড়ি, পিঠা, মুড়ি ঘণ্ট সহ অনন্ত শত পদের রান্না করা যায় এই চাল দিয়ে। শৌখিন রাঁধুনিরা হালিম থেকে শুরু করে নানা পদের রান্না করেন তুলশীমালা চাল দিয়ে। যা শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের কাছেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই চালের জাউ ভাত রোগী ও বয়স্কদের কাছে খুবই প্রসিদ্ধ আর খিচুড়ি বা সেরেলাক হিসেবে বাচ্চাদের জন্য মায়েদের প্রথম পছন্দ।

৭। তুলশীমালা চালের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা
পত্র পত্রিকা সহ বিভিন্ন সোর্স থেকে জানা যায়, শেরপুরের তুলশীমালা চালে রয়েছে — কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফাইবার এবং ভিটামিন B কমপ্লেক্স। যা শরীরকে শক্তি যোগাতে এবং হজমে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, হৃদরোগের ঝুঁকি কমা সহ ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। তাই বলা যায় উচ্চপুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি চাল। মূলত এই চালের খাবার খাওয়ার পরই কিছুটা ভালো মন্দ উপলব্ধি করা যায়।
৮। অরিজিনাল তুলশীমালা চালের দাম
আওয়ার শেরপুর ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই অনলাইনে প্রচার ও প্রসার শুরু হয়েছে। তাই অরিজিনাল তুলশীমালা চালের জন্য একটি বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান এই। ২০২০ সাল থেকেই বিক্রি করছে সারাদেশে। রয়েছে হাজার হাজার কাস্টমার রিভিউ। এই চালের দাম বিভিন্ন সময় উঠানামা করে তাই আপডেট দাম জানতে ও অর্ডার করতে আওয়ার শেরপুর ভিজিট করুন। বর্তমান দাম ১৪০ টাকা কেজি।
৯। ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও বিশ্বজয়ের সম্ভাবনা
তুলশীমালা চাল শেরপুরের ঐতিহ্য। এটি সংরক্ষণের দায়িত্বও আমাদের। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে বিক্রি ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই কৃষকের উৎসাহ বজায় থাকবে আর রপ্তানি করা যাবে বিদেশে। ফলে সমৃদ্ধ হবে আমাদের স্থানীয় অর্থনীতি।